স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়গুলোতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যারা দুর্যোগের আগে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সাধারণ মানুষদের সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং পরে উদ্ধারসহ জানমাল রক্ষার কাজে সহায়তা করে। আর এ রকম কাজ করে থাকে সাইক্লোন প্রিপারডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে উপকূলীয় জেলাগুলোর সবজায়গায় প্রয়োজন অনুযায়ী সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক নেই। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়া বরিশাল জেলার অন্য কোনো উপজেলা এবং গোটা ঝালকাঠি জেলাতে নেই সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক। কিন্তু বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলার মধ্যেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে। বিশেষ করে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও বৃহত্তর মেঘনা, কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, তেতুলিয়া, কারখানা, পায়রা, বিষখালীসহ বিভিন্ন নদী বেষ্টিত ঝালকাঠির নলছিটি, কাঠালিয়া এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জ, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদীতে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক নেই। যদিও বিগত দিনে বরিশালের ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের জন্য স্থানীয় বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে সহায়তাও চেয়ে আসছেন সিপিপির কর্মকর্তারা। সিপিপি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোটা বরিশাল অঞ্চলে সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে ৩৩ হাজার ৪০০ জন। যার মধ্যে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে পাঁচ হাজার ৬৪০, ভোলায় ১৩ হাজার ৬০০, বরগুনায় ১১ হাজার ৬০০, পিরোজপুরে এক হাজার ৭০০ জন রয়েছে। এর বাইরে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় তিনটি ইউনিটে ৬০ জন এবং খুলনার বাগেরহাটের শরণখোলায় রয়েছে ৯০০ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। যাদের নিয়ন্ত্রণ সিপিপি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কাছে। তবে নগর ব্যতিত বরিশাল জেলার উপজেলাগুলোতে এবং গোটা ঝালকাঠি জেলাতে সিপিপির কোনো স্বেচ্ছাসেবক নেই। অর্থাৎ ওইসব এলাকায় সিপিপির কোনো কার্যক্রমও নেই। আবার যেসব জায়গাতে রয়েছে তার মধ্যে পিরোজপুর জেলায় তুলনামূলক কমসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যেসব জায়গাতে সিপিপির কোনো কার্যক্রম নেই, তার মধ্যে কিছু জায়গাতে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করে থাকেন। আর বাকিগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচারণার কাজটি করে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এভাবে দুর্যোগের আগে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণার কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। আবার দুর্যোগের পরে উদ্ধারসহ যে কোনো কার্যক্রমও পরিচালিত হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে। যদিও তাদের জন্য নিয়মিত কাজের বাহিরে এসব কাজ পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। মেহেন্দিগঞ্জের চরবগী এলাকার বাসিন্দা তারেক খান জানান, তাদের এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক না থাকায় ঘূর্ণিঝড়সহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেই তাদের বিপদে পরতে হয়। কারণ নদী বেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার অনেক জায়গাতেই এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজ চলছে, তার ওপর এখানকার বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র ও শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় অসেচতন। ফলে আগাম প্রচারণার অভাবে অনেকেই বিপদের মুখে পরছেন। সিপিপি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহাবুদ্দিন মিঞা জানান, নগর ব্যতিত বরিশাল জেলায় এবং ঝালকাঠি জেলার কোথাও তাদের কোনো স্বেচ্ছাসেবক নেই। বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ ও সদর উপজেলার একটা অংশ পুরোপুরি নদী বেষ্টিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে সিপিপি’র কার্যক্রম চালু করা দরকার। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করা হচ্ছে। এদিকে বিষয়টি জানার পর স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগে জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল।
Leave a Reply